মজার একটা সত্য ঘটনা বলি । আমি তখন বেকার । মোটামটি যত বড় বড় কোম্পানি আছে সবখানে ইন্টারভিউ দেওয়া চলছে । জার্মানীর একটা স্কলারশীপ পাইয়াও যাইতে পারতেছিনা । খুব টেনশন । সেই মাহেদ্রক্ষনে আমাকে মোহনা টিভি থেকে ডাকা হলো ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ার পোস্টে ইন্টাভিউ এর জন্য (মিরপুরের কামাল মজুমদার তার মেয়ের নামে মোহনা টিভি করেছেন, ইত্যাদির কাশেম টিভি কনসেপ্টে) . সেই ইন্টারভিউ দেওয়ার পর আমি আর কোনদিন আর টিভি চ্যানেলের পথ চাকুরীর জন্য মারাইনি । স্বয়ং চ্যানেলের মালিক সহ কয়েকজন বোর্ডে । অনেক প্রশ্নের মাঝে আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো
আপনি ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কি বিএসসি করেছি নাকি বিএ ??
হায়রে আমার দেশ, টিভি চ্যানেলের মালিকের মেরিট লেভেল যদি বিএ আর বিএসসি কি , ইঞ্জিনিয়ারিং এ যে বিএ করা যায় না সেটা বুঝার ক্ষেমতা না থাকে তবে সে দেশের ভবিষ্যত এতোটাই উজ্জ্বল যেমন ঘরে আগুন লাগলে বেশী আলোকিত হয় ঠিক তেমন । তবে আমি নিশ্চিত যদি মোহনা বিশ্ববিদ্যালয় করার সুযোগ তিনি পেতেন তবে “বিএ ইন ইলেক্ট্রিক্যাল” সাবজেক্ট খুলতেন তিনি । আমাদের ভাগ্য এখানেই বাধা পড়ে আছে ।
বেকারত্ব আমাদের বর্তমান সময়কে কুড়েকুড়ে খাচ্ছে । অনেক তরুনদের সাথে আমার সম্পর্ক । গড়ে প্রতিদিন আমাকে অনেকের সাথে কথা বলতে হয় । এতো বেশী তরুন এখন বেকারত্ব নিয়ে ফ্রাসটেটেড যে বলে বুঝাতে পারবো না । ওদের কাছে ডিগ্রী আছে, পরিশ্রম করার যৌবনের শক্তি আছে, নতুন কিছু করে দেখাবার সাহস আছে কিন্তু সুযোগ নেই । টম এন্ড জেরী খেলছে সময় তাদের সাথে । কিন্তু সেই যুবকটি যেমন জানে যে , দিন একদিন তার আসবে । ভালদিন আসলে ফাটায় ফেলামু । কিন্তু সেই ভালদিন কবে আসবে ।
আমার বন্ধুর ছোট ভাই রাজিব টা মরে গেলো । আমাদের রাষ্ট্র আমাদের বাঁচতে শেখায় না বরং মরতে উদ্ভুদ্ধ করে । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি তার বাতিল হয়েছিলো । জানি না প্যারিস রোডে শুকনো পাতারা তার জন্য আরো রুক্ষ ভাবে উড়াউড়ি করছে কিনা কিংবা করতোয়ার জলে কারো অশ্রু মিশেছে কিনা । শুধু বলতে চাই আমাদের দেশে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবৈধ ভর্তি যে কি ক্ষতিকর তা বলে বুঝাতে পারবো না । কারন যখন ঐ ছাত্রটিকে বের করে দেওয়া হয় তখন তার আর ঘুরে দারাবার কোন জায়গা বা সময় থাকে না । এই অবৈধ ভর্তি বন্ধ করতে হবে । ধ্বংস হচ্ছে অনেকে ছেলে মেয়ের জীবন এভাবেই ।
আমার বেকারত্বের অভিজ্ঞতা অনেকটা শুকনা মরিচের ঝালের মত । খাওয়ার সময় ভাল লাগলেও এর রয়েছে বিবিধ সাইড ইফেক্ট । সরকারী বেসরকারী মিলিয়া এতো বেশী বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে যে ইচ্ছে করলেও এপ্লাস এর মত সব মেধাবীর ভীরে আসল হীরে খুজে পাওয়া দুষ্কর । ইদানিং আমি নিজেও খুজে ফিরি চঞ্চল মেধাবী পরিশ্রমী দুচোখ । এখন নিউকামারদের সবাই মেধাবী , সবাই এপ্লাস । সবাই ভাল সাবজেক্টে পড়ে । টাকা হলেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবি, সাংবাদিক, পাইলট সহ যা ইচ্ছে হওয়া যায় ।
সরকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিম্ন আয়ের চাকুরীতে জয়েন করার পর আমি কিছুদিন টিউশন পড়াতাম । এক ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রকে পড়াতে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতা ভীষনরকম বেদনাদায়ক । সে ৩বর্ষের ছাত্র হয়েও অনেক বেসিক বিষয়ে অজ্ঞ । এমন অনেককে দেখেছি যেই বিষয়ে পড়ছে সেই বিষয়ে বেসিক কনসেপ্ট পরিস্কার না । আহারে আমাও দেশের কি হপে । ডাক্তার হওয়ার মানসিক ইচ্ছা ও কায়িক যোগ্যতা কোনটাই না থাকা সত্তেও দিব্যি ডাক্তার হয়ে যাচ্ছে দামাল কামাল করা ছেলে মেয়েগুলো । আসলে বেকারত্ব যে হারে বাড়ছে সমানুপাতিক হারে অযোগ্য ডিগ্রিধারী বাড়ার পরিমান দিগুন । চারিদিকে শুধু কানার হাটবাজার ।
ক্রিয়েটিভ কিছু প্রোফেশনে এখনও কিছুটা যোগ্যতা ও মেধার মুল্যায়ন আছে । কিন্তু সেটাও খারাপ অবস্থার দিকে যাছে । আমার পরিচিত এক আলালের ঘরের দুলাল সেলিব্রিটি হওয়ার লাইগা নাটক বানাতাহে । মানে ভারতমাতার কাছে কনসেপ্ট চুরি কইরে নাটক । টেলিভিশন চ্যানেল এতো বেশী যে প্রতিভার সঠিক মুল্যায়ন অসম্ভব হয়ে পড়েছে । প্রত্যেক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীরে যদি এইভাবে টিভি চ্যানেল দিতে থাকেন দুই দলে তবে “ইত্যাদি”র কাশেম টিভি অসম্ভব কিছু নয় । মিরপুরের কামাল মজুমদার তো তার মেয়ের নামে মোহনা টিভি কইরাই ফেলাইছে ।
বেকারত্ব অনেকটা কুমারীত্ব’র মতই । অবসান চায় সবাই । একসময় হয়তো তা আসল সুখের রস আস্বাদন করবেই । শুধু অপেক্ষার সময়টাই কঠিন । কিন্তু যেনে রেখো যে অপেক্ষা করতে জানে তার কাছে সবকিছুই আসে । ভালদিন আসবেই । সবার জন্য শুভকামনা